চুলের যত্নের কথা ভাবলেই আমাদের মাথায় আসে আমলকির কথা। আমলকি আমাদের চুলের জন্য খুবই গুরুতপূর্ণ একটি উপাদান। আমলকি আমাদের চুল কে গোড়া থেকে শক্ত করে এবং চুল পড়া বন্ধ করে।তাছাড়া আমলকি ব্যাবহার করলে চুল হবে ঝলমলে কালো।
চুলের প্রসাধনী:
বাজারের বিভিন্ন প্রোডাক্ট আমাদের চুল কে dry করে দেয়।আমরা চুলের যত্ন নিতে অনেক কিছু ব্যাবহার করতে যেয়ে চুল কে রুক্ষ ও প্রাণহিন করে ফেলি।কিন্তু আপনি কি কখনও খেয়াল করে দেখেছেন আগের কালের মেয়েদের কত ভালো চুল ছিল?আপনি যতই প্রোডাক্ট ব্যাবহার করুন না কেনো আগের কালের মেয়েদের যেমন চুল ছিল তেমন চুল আপনি পেতে পারবেন না।এর কারণ একটাই আগের কালে এতোসব কেমিক্যাল প্রোডাক্ট এর ব্যাবহার ছিল না।আগের মেয়েরা শুধু প্রাকৃতিক উপাদান ব্যাবহার করতো।তাই আমাদের ও প্রাকৃতিক উপাদান ব্যাবহার করা দরকার।
আমলকির যত গুণ:
আমলকীর রস চুলের ফলিকলগুলো শক্তিশালী করে চুলকে মজবুত করে। দ্রুত চুল বাড়তে সাহায্য করে। এটি মাথার ত্বক ও চুলের টনিক হিসেবেও দারুণ কাজ করে। নিয়মিত আমলকীর রস পান করলে এতে থাকা ভিটামিন সি ও অ্যান্টি-অক্সাইড বয়সের আগে চুল পাকা রোধ করবে।
আমলকি দিয়ে চুলের যত্ন:
চুলের হাজারো সমস্যার সমাধান একটাই,আমলকি।কিন্তু ভাবছেন আমলকি কিভাবে বাহবার করবেন?কিভাবে ব্যাবহার করলে ফলাফল ভালো পাবেন?তবে আজ আমি আপনাদের বলব কিভাবে এবং কি করে আমলকি ব্যাবহার করবেন।চলুন শুরু করি।
ঘরোয়া পদ্ধতি তে আমলকির ব্যাবহার:
১.আপনি ৪/৫ টি আমলকি ছোট করে কেটে আধা গ্লাস পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রাখুন।সকালে উঠে ওই পানি সহ আমলকি গুলোর ভালো করে মিশ্রণ তৈরি করুন।তারপর নারকেল তেলের সাথে মিশিয়ে আপনার চুলে মাখুন।১৫ মিনিট রেখে দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।তবে ওইদিন shampoo ব্যাবহার করবেন না।পরের দিন shampoo দিয়ে ধুয়ে নিন।
২.কয়টা আমলকি কেটে নারকেল তেলে বা আপনি যে তেল টা ব্যাবহার করুন তার ভিতর ভিজিয়ে রেখে সেই তেল টা চুলে ব্যাবহার করুন।
৩.একটি tea bag গরম পানি তে একবার ডুবিয়ে তারপর tea bag এর ভিতরের সবটা বের করে নিন এবং ২/৩ টা আমলকি দিন ও পরিমাণ মতো পানি দিয়ে একটা মিশ্রণ বানিয়ে চুলে মাখুন।৩০ মিন রেখে shampoo ধুয়ে ফেলুন।
চুলের বৃদ্ধিতে আমলকি:
আমলকির ভিতরে থাকা ভিটামিন, ফাইটো-নিউট্রিয়েন্ট এবং খনিজ পদার্থ মাথার ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধিতে এবং চুলের বৃদ্ধি তে প্রচুর সাহায্য করে।আমলকি তে থাকা কোলাজেন প্রোটিন চুলের ফলিকলের মৃত কোষ দূর করে নতুন কোষ সৃষ্টি তে সাহায্য করে।চুলের বৃদ্ধি ঘটাতে আমলকির মধ্যে থাকা এইসব পুষ্টি উপাদান খুবই গুরত্বপূর্ণ।
চুলের খুশকি দূর করতে:
চুলে খুশকি হয় সাধারণত শুষ্কতার কারণে।শীত আসলেই খুশকির সমস্যা বেশি দেখা দেয়।কারণে শীতের বাতাস অনেক শুষ্কতা নিয়ে আসে।আমলকি খুশকি দুর করতে অনেক সাহায্য করে।আমলকিতে থাকা ভিটামিন সি মাথায় খুশকি জমতে বাধা দেয়।এই ভিটামিন সি প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল সমৃদ্ধ যা মাথার শুষ্কতা দূর করে এবং খুশকি হতে বাধা দেয়।
কন্ডিশনার হিসেবে আমলকি:
আমলকি ব্যবহারে চুল পুষ্ট,মজবুত হওয়ার পাশাপাশি চুলকে কন্ডিশন করতেও সাহায্য করে।একটি আমলকিতে প্রায় ৮১.১২ শতাংশ আর্দ্রতা থাকে যা আমাদের চুলের ভলিউম বাড়াতে সাহায্য করে।চুলে এক্সট্রা শাইন যোগ করে দেয়।আমলকি শুষ্ক চুলের যত্নে সবচেয়ে বেশি উপকারী একটি উপাদান।
তৈলাক্ত মাথার চুলের যত্নে আমলকি:
আমলকি শুষ্ক চুলের পাশাপাশি তৈলাক্ত চুলের জন্যও সমান উপকারী।যদি আপনার তৈলাক্ত মাথার সমস্যা থাকে তো আপনি আমলকির পাউডার ইউজ করতে পারেন। এটি চুলের অতিরিক্ত তেল কে ভিজিয়ে রাখবে ফলে চুল আর তৈলাক্ত দেখবে না এবং চুল অনেক হেলথদি দেখাবে।
মাথার ত্বক পরিষ্কারে আমলকি:
চারিদিকের নানা দূষণ আমাদের মাথার ত্বকে ড্যামেজ ঘটায়।ফলে আমাদের চুলের ও অনেক ক্ষতি হয়।চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয় তাই মাথার ত্বক নিয়মিত পরিস্কার রাখা খুবই দরকার।আর মাথার ত্বক পরিষ্কারে আমলকি রসের ভূমিকা অনেক।আমলকির রসে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট মাথার ত্বককে ধুলাবালি এবং বিভিন্ন দূষণ থেকে রক্ষা করে।ফলে চুলের কোনো ক্ষতি হয় না।
চুলের গোড়া মজবুত করতে আমলকি:
আমলকির রস ও আমলকির তেল চুলের গোড়া মজবুত করে। এটি চুলের গোড়ার ফলিকল গুলো কে ভিতর থেকে শক্তিশালী করে তোলে এবং চুলের অকাল পেকে যাওয়ার হাত থেকেও রক্ষা করে।
আমলকির আরো কিছু উপকারিতা:
আমলকি এমন একটি ফল যা বহুমুখী প্রতিভা সম্পন্ন একটি ফল। এটি একই সাথে চুল এবং ফেস এর জন্য যতটা উপকারী তেমনি বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ও আমলকির ব্যাবহার রয়েছে।আমলকি খেলেও চুলের ভালো হয়।তাছাড়া আমলকি চুল কে ঘন কালো ও লম্বা করতে সাহায্য করে।
আমলকির তেল:
আমলকি একটি খুবই পুষ্টিকর ফল। এটি রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, চুল পড়া বন্ধ করতে আমলকির তেল খুবই কার্যকর। এটি চুলের বৃদ্ধির পাশাপাশি চুল ঝলমলে করতেও অতুলনীয়।আমলকির তেল আপনি ঘরে বসে খুব সহজেই তৈরি করে ফেলতে পারবেন।আমলকির তেল চুলের অন্যতম একটি পুষ্টিকর খাদ্য।
তবে অবশ্যই একটা ব্যাপার খেয়াল রাখবেন,বাজারের বিভিন্ন প্রোডাক্ট ব্যাবহার করার থেকে সতর্ক থাকতে হবে।চেষ্টা করবেন কোনো কেমিক্যাল প্রোডাক্ট ব্যাবহার না করার।আমলকি ব্যাবহার শুরু করলে আপনার আর কোনো প্রোডাক্ট ব্যাবহার করার দরকার হবে না আশা করছি।