ঠোঁট ফাটা থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়

1
186

শীতকালে ঠোঁট ফাটা একটি খুবই সাধারণ বিষয়।কম বেশি প্রায় সবারই ঠোঁট ফেটে থাকে শীতকালে।তার কারণ শীতের শুষ্ক বাতাস।আমদের ত্বকের থেকে ঠোঁট অনেক বেশি নরম ও কোমল হয়ে থাকে তাই সহজেই ঠোঁট ফেটে যায়।ফাটা ঠোঁট আমাদের কাছে খুব বাজে একটা সমস্যা।আজ তাই আমি শীতের এই ফাটা ঠোঁট থেকে মুক্তির উপায় বলতে এসেছি।

ঠোঁট ফেটে যাওযার কারণ:

ঠোঁট ফাটার অনেক কারণ রয়েছে।কিন্তু তার মধ্যে অন্যতম কারণ শীতের বাতাস খুব শুষ্ক। শীত কালে বাতাসের আর্দ্রতা কমে যাওয়ার ফলেই ঠোঁট ফেটে যায়।কিন্তু তাছাড়াও আরো কিছু কারণ থাকতে পারে যেমন পর্যাপ্ত পানি পান না করা,দিনের বেশির ভাগ সময় সূর্যের রোদে থাকা,হতে পারে আপনার শরীরের ভিটামিন এর অভাব ও।

শুষ্ক বাতাস:

শীতে অন্যান্য অংশের তুলনায় ঠোঁট আগে ফাটে, কারণ এটি মূলত চামড়ার উপরিভাগের খুব পাতলা স্তর। তাই শীতকালে বাতাসে শুষ্কতার পরিমাণ বেশি হলে শরীর থেকে জলীয় অংশ কমে যায় এবং তখন চামড়ার এই স্তরটি দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হয় অর্থাৎ শুকিয়ে ফেটে যায়।

ভিটামিন এর অভাব:

শরীরে কোষের কাজের জন্য ভিটামিন B 2 প্রয়োজন। ডিম ও মাংস খেলে এই ভিটামিন শরীরে ঢোকে। অনেক সময় নিয়মিত কোনও ওষুধের জেরে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়।তাই পর্যাপ্ত পরিমাণ ডিম ও মাংস খেয়ে শরীরের ভিটামিন B 2 এর পরিমাণ বাড়িয়ে তুলুন।তাহলে আর ঠোঁট ফাটা নিয়ে ভাবতে হবে না।

পানি পান না করা:

শীতের দিনেও পানি পান করা টা সমান দরকারি আমরা অনেকেই আছি সিতেকালে পানি কম পান করি কিন্তু এইটাই হতে পারে আপনার ঠোঁট ফাটার অন্যতম একটি কারণ।পানি পান না করলে আমাদের শরীর ভিতর থেকে শুষ্ক হয়ে যায় আর শীতকালের বাতাস তো শুষ্ক থেকেই।দুটো মেলে আপনার ঠোঁট কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হতেই পারে।

আমাদের ঠোঁট এতটাই কোমল যে সামান্য একটু শুষ্কতার কারণেই এটি ফেটে যায়।ফাটা ঠোঁট নিয়ে লোকের মাঝে যেতেও আমরা লজ্জা পায়।তাই ফাটা ঠোঁটের প্রতিকার করা দরকার।ফাটা ঠোঁট থেকে বাঁচতে আমরা অনেকেই আছি নামী দামী lip balm ব্যাবহার করে থাকি।কিন্তু তাতেও কোনো সুবিধা হয় না।lip balm না নিলেই আবার ঠোঁট ফেটে যায়।

ঠোঁট ফাটা থেকে বাঁচতে লিপ বাম:

Lip balm এ থাকে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল যা সল্প সময়ের জন্য আমাদের ঠোঁট ফাটা কে কমিয়ে দেয় কিন্তু যখনই আমরা lip balm ব্যাবহার না করে থাকি তখন আবার আগের মতোই ঠোঁট ফেটে যায়।আর এইসব ক্ষতিকারক কেমিক্যাল আমদের কোমল ঠোঁট কে খোসখসে,রুক্ষ,শুষ্ক করে তোলে।তাই চেষ্টা করুন কেমিক্যাল জিনিস ব্যাবহার না করতে।

কেনো ঘরোয়া পদ্ধতি ইউজ করবেন:

আজ আমি বলবো সম্পূর্ণ ঘরোয়া উপায়ে কোনো কেমিক্যাল প্রোডাক্ট ব্যাবহার ছাড়াই কিভাবে ঠোঁট ফাটা কমাতে পারবেন সেই উপায়।ঘরোয়া মানেই প্রাকৃতিক আর সম্পূর্ণ বিশ্বাসযোগ্য উপাদান দিয়ে তৈরি উপকরণ।তাছাড়া জিনিস টি আপনি নিজে তৈরি করবেন তাই অবশ্যই কোনো কেমিক্যাল থাকবে না।ঘরে বসে খুব সহজেই আপনি এটি তৈরি ও করতে পারবেন আর ব্যাবহার ও করতে পারবেন।তবে দেরি কিসের চলুন শুরু করি।

ঠোঁট ফাটা কমাতে ঘরোয়া পদ্ধতি:

উপকরণ: মধু,একটি লেবু,হলুদ গুঁড়ো ও নারকেল তেল।

তৈরি পদ্ধতি: একটি বাটিতে এক চামচ মধু,আধা চামচ লেবুর রস,হলুদ গুঁড়ো পরিমাণ মতো ও এক চামচ নারকেল তেল দিয়ে ভালো করে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিন।

ব্যাবহার বিধি: মিশ্রণ টিকে ঠোঁটে মাখুন।একটু ঘন করে মেখে নিন।২ মিনিট অপেক্ষা করুন তারপর একটি টিস্যু দিয়ে ঠোঁট ধুয়ে নিন।

উপকরণের উপকার:

মিশ্রণ টিতে রয়েছে মধু আর মধু তে রয়েছে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ কারি উপাদান যা আমাদের ঠোঁটের ব্যাকটেরিয়া দুর করবে এবং শুষ্ক ঠোঁট এ আর্দ্রতা ফিরতে সাহায্য করে।রয়েছে নারকেল তেল যেটি ঠোঁট কে কোমল করে তুলতে সাহায্য করে।নারকেল তেল আমাদের ঠোঁটের প্রাকৃতিক moisturizer হিসেবে কাজ করে।তাছাড়া লেবুর রস ঠোঁটের ময়লা দুর করবে কারণ লেবু তে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড সব জমে থাকা ময়লা গলিয়ে বের করতে সাহায্য করে এবং হলুদ গুঁড়ো ঠোঁটে একটা glow এনে দেবে।

ঠোঁট ফাটা থেকে মুক্তির আরো কিছু পদ্ধতি:

১.অ্যালোভেরা:
রাতে ঘুমনোর আগে ঠোঁটে অ্যালোভেরা জেল ইউজ করুন।অ্যালোভেরা জেলে রয়েছে প্রাকৃতিক moituraizing ফ্যাক্টর যা ঠোঁটের ফাটা কমিয়ে ঠোঁট কে কোমল করে তুলতে সাহায্য করে।

২.অলিভ ওয়েল:
দিনের যেকোনো সময় বিশেষ করে সূর্যের রোদে যাওয়ার আগে অবশ্যই ঠোঁটে একটি লিপ বাম ইউজ করার দরকার কিন্তু লিপ বাম তো ঠোঁটের জন্য ক্ষতিকর।তাই অলিভ ওয়েল কে প্রাকৃতিক লিপ বাম হিসেবে ইউজ করতে ভুললে চলবে না।অলিভ ওয়েল ঠোঁট ফাটা কমাতে আপনাকে সাহায্য করবে।

৩. গ্লিসারিন:
শুষ্ক ত্বক এবং ফাটা ঠোঁটের জন্য ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে গ্লিসারিন উপযুক্ত। এটি ঠোঁটে এবং চোখের চারপাশে লাগান।ঠোঁট ফাটা থেকে বাঁচতে ঠোঁটে গ্লিসারিন ইউজ করতে পারেন এটি ঠোঁটের শুষ্কতা কমিয়ে আর্দ্রতা বাড়িয়ে তুলতে আপনাকে সাহায্য করবে।

ঠোঁট ফাটা থেকে বাঁচতে লিপস্টিক :

শীতকালে ঠোঁটের আর্দ্রতা কমে যাওয়ার কারণে ঠোঁট শুষ্ক হয়ে ফেটে যায়। আপনার ঠোঁট শুষ্ক হলে ম্যাট লিপস্টিক না লাগিয়ে ক্রিম সমৃদ্ধ লিপস্টিক লাগান। ঠোঁটের ক্ষতি এড়াতে লিপস্টিক লাগানোর আগে অবশ্যই লিপগ্লস লাগান।আপনি লিপগ্লস হিসাবে ভ্যাসলিন ইউজ করতে পারবেন।ম্যাট লিপস্টিক ঠোঁট কে আরো বেশি শুষ্ক করে দেয় তাই ম্যাট লিপস্টিক ইউজ করা যাবে না।

ঘরোয়া পদ্ধতি ইউজ করলে আপনার স্কিন এর কোনো ক্ষতি হবে না।আপনার ঠোঁট ফাটা কমে যাবে এবং ঠোঁটের কোনো ক্ষতি হবে না।ঠোঁট মানুষের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।তাই ঠোঁটের যত্নে অবশ্যই ঘরোয়া উপায় ইউজ করা ভালো।দিনে ঘরোয়া পদ্ধতি গুলোর ভালো ফলাফল পেতে দিনে দুই বার এটি ব্যাবহার করুন।সকালে এবং রাতে ঘুমনোর আগে।আসা করছি ভালো ফলাফল পাবেন।

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!