বর্তমানে চুলের নানারকম সমস্যার মধ্যে চুল পরে যাওয়া খুব সাধারণ একটি সমস্যা।শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা প্রায় সব ঋতু তেই আমদের চুল পড়তেই থাকে।চুল পড়ে যাওয়ার ফলে আমাদের চুল হয়ে যায় পাতলা।তখন যেভাবেই চুল বাঁধুন না কেনো কোনোটিই ভালো দেখা যায় না।
চুলই একটি মেয়ের আসল সৌন্দর্য্য।তাই চুল পড়া নিয়ে আমরা চিন্তিত হয়ে পড়ি।জ আমি এসেছি ৪ টি এমন কার্যকরী উপায় নিয়ে যা আপনার চুল পড়ার হার কমিয়ে দেবে।
তবে চলুন শুরু করা যাক।
চুল পড়ার সঠিক কারণ:
চুল পড়ার অনেক কারণ রয়েছে।আমাদের বিভিন্ন ভুলের জন্যই প্রতিনিয়ত চুল পড়ার সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
হেয়ার স্টাইল টুলস:
চুল পড়ার কারণ হিসেবে বিভিন্ন hair product ব্যবহার,বাইরের ধুলো ময়লা,hair colour,আমদের রোজকার দিনের খাওয়া দাওয়া,অতিরিক্ত shampoo ব্যাবহার করা ইত্যাদি কে চিহ্নিত করা যায়।বিভিন্ন ধরনের hair product আমাদের চুল কে অত্যধিক dry করে দেয়।তাই এইগুলো ব্যাবহারে সচেতন থাকতে হবে।
মানসিক চাপ:
মানসিক চাপ ও নিম্ন মানের জীবনযাত্রা চুল পড়া সমস্যার কারণ হতে পারে।তাছাড়া অপর্যাপ্ত ঘুম চুল পড়ার খুবই পরিচিত কারণ।মানসিক চাপ এবং ঘুম না হওয়ার ফলে শরীর বিভিন্ন হরমোনের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে জার বলে চুল পড়ে যায়।
ভিটামিন এ ও ডি:
শরীরে ভিটামিন এ এর আধিক্য দেখা দিলে চুল পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।তবে ভিটামিন ডি চুল পড়া রোধ করে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।তাই শরীরে ভিটামিন এর অভাব থাকলে চুল পড়ে যেতে পারে এমনকি টাক হয়ে যাওয়ার জন্যও ভিটামিন ডি এর অভাব লক্ষ করা গেছে।
হরমোন ও থায়রড:
হরমোনের এবং থাইরড এর সমস্যা থাকলে মেয়েদের বিশেষ করে চুল পড়ে যায়।তাছাড়া বহুদিন ধরে শারীরিক অসুস্থতা,রক্তস্বল্পতা এর কারণেও চুল পড়ে যায়।আজকাল অনেকেই ওজন কমানোর জন্য ডায়েট করেন।এই ডায়েট এর কারণেও চুল পড়ে যায়।তাই ডায়েট প্ল্যান করার আগে অবশ্যই একবার চিকিৎসক এর সাথে পরামর্শ করে নিবেন।
চুল পড়া রোধে করণীয়:
১.পেঁয়াজ:
চুল পড়া কমাতে এবং নতুন চুল গজাতে পেয়াঁজ খুব সাহায্য করে।পিয়াঁজ এর রস সপ্তাহে ২ দিন চুলে মাখুন।৩০ মিনিট মতো রেখে তারপর shampoo দিয়ে ধুয়ে নিন।অনেকেই ভাবেন যে পেঁয়াজ এর বাজে গন্ধ থেকে যাবে চুলে তাই গন্ধ এড়াতে ভালো shampoo ব্যাবহার করুন।

২.ডিম:
চুল পড়া কমাতে ডিম আপনাকে সাহায্য করবে।ডিমের সাদা অংশ টুকু চুলে মাখুন সপ্তাহে ১ দিন।ডিমের কুসুমের অংশ টুকু বাদ দিন কারণ ঐটা আপনার চুলের জন্য উপকারী না।তাই কুসুম টা না ব্যাবহার করাই ভালো।ডিম ব্যাবহার করলে চুল পড়া কমে যাওয়ার পাশাপাশি আপনার ভুল কে ঝোলমলে করে তুলবে।

৩.জবা:
আপনি চুল পড়া কমাতে চাইলে অবশ্যই এই টিপস টা অনুসরণ করুন।জবা ফুল এর গুন তো আমরা সবাই জানি।আপনি ২/৩ টা জবা ফুল নিন এবং জবা ফুলের ২/৩ টা পাতা নিন।এই দুটোর ভালো করে একটা মিশ্রণ তৈরি করুন এবং সেইটা চুলে মাখুন।তারপর ৩০ নিন রেখে ভালো একটি shampoo দিয়ে ধুয়ে নিন।এই কাজ টি আপনি সপ্তাহে একদিন করুন।
৪.নারকেল তেল:
উপরের ৩ টি টিপস মেনে চললে আপনার চুল পড়া কমে গেছে আসা করসি।তবে আপনি এই টিপস তাই মেনে চলুন।আপনি একটু নারকেল তেল নিন তার ভিতর কয়টা মেথীদানা ভিজিয়ে রাখুন তারপর মেথিদানা বের করে সেইটা একটা pest তৈরি করুন এবং আপনার চুলে মাখুন।১৫ মিন রেখে shampoo দিয়ে ধুয়ে নিন।
৫.মেথি:
মেথি চুলের জন্য অনেক উপকারী একটি উপাদান।এটির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও নিকোটিনিক এসিড রয়েছে যা চুলকে ভেতর থেকে পুষ্টি যোগায় এবং চুলকে গোড়া থেকে মজবুত করে।তাই চুল পোড়া যাওয়া বন্ধ করতে মেথি কে ভুলে গেলে একেবারেই চলবে না।
চুলের যত্নে শ্যাম্পু:
আজকাল কেউ চুলে তেল দিয়ে বাইরে বের হতে চাই না।তাছাড়া চুল কে পরিষ্কার রাখতে শ্যাম্পু করার ও অনেক প্রয়োজন রয়েছে।কিন্তু শ্যাম্পু তে থাকে নানা প্রকার কেমিক্যাল প্রোডাক্ট যেগুলো বার বার ইউজ করলে আমাদের চুলের অনেক ক্ষতি হতে পারে।তাই শ্যাম্পু ব্যবহারেও সতর্ক থাকতে হবে।প্রয়োজনে আপনার চিকিৎসকের পরমস্ত নিয়ে একটি উপযুক্ত শ্যাম্পু আপনার চুলের জন্য বেছে নিন।
শ্যাম্পু ইউজ করার সঠিক নিয়ম:
চুল পড়া বন্ধ করতে গেলে আমরা যেই পদ্ধতিটিই ফলো করি না কেনো চুল কে সবার আগে ঠিক থাকে ভাবে পরিষ্কার রাখতে হবে।চুল পরিষ্কার না থাকলে চুলের বৃদ্ধি ও হবে না আর চুল বেশি করে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।তবে চুল পরিস্কার রাখতে কেমন শ্যাম্পু ইউজ করবেন সেইটাই একটা বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়।তবে আপনি যে শ্যাম্পু তাই ইউজ করবেন সেইটা কিন্তু সপ্তাহে শুধু ২ বার ইউজ করবেন।সপ্তাহে ২ বারের বেশি শ্যাম্পু করা চুলের জন্য একদম ভালো নয়।
খাদ্যাভ্যাস:
অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস চুল পড়ার অন্যতম কারণ। ডিম, দুধ, সামুদ্রিক মাছ ও ভিটামিন-ই যুক্ত খাবার চুলের জন্য খুবই উপকারি। চুল পড়া রোধে মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং দুশ্চিন্তামুক্ত থাকা জরুরি। শরীর সুষম খাবার না পেলে ফিডব্যাক কখনোই ভালো দেবে না; বরং তৈরি হতে পারে হরমোনাল ইমব্যালেন্স।তাই চুল পরিস্কার রাখার পাশাপাশি নিজের খাদ্য তালিকায় পুষ্টি যুক্ত খাবার যোগ করতে হবে।চুল কে শরীরের ভিতর থেকে মজবুত করতে খাদ্যের প্রোটিনের প্রয়োজন রয়েছে।

চুলে চিরুনি করা:
চুলে চিরুনি করাটা খুবই দরকারি।চুলে চিরুনি করলে একদিকে আমদের চুলের জোট ছড়িয়ে যায় অন্যদিকে মাথার তোকে রক্ত সঞ্চালন ও বাড়িয়ে দেই।মাথার ত্বকে ভালো করে রক্ত সঞ্চালন হওয়ার ফলে আমাদের চুলের রিগ্রথ হয় এবং একই সাথে চুল পড়া বন্ধ করতেও সাহায্য করে।দিনে ২/৩ বার চুলে চিরুনি ইউজ করুন।রাতে ঘুমনোর আগে অবশ্যই চুলে চিরুনি করে ঘুমোবেন।এবং চেষ্টা করবেন ঘুমনোর সময় চুল গুলো কে আলতো করে বেধে রাখার।এটি চুলের ভেঙে যাওয়া রোধ করবে।
হেয়ার প্যাক:
আপনার চুলের ধরন অনুযায়ী একটি হেয়ার প্যাক কিন্তু খুবই দরকারি।হেয়ার প্যাক চুল পড়া বন্ধ করতে এবং চুল কে মজবুত করতে অনেক সাহায্য করে।আপনার চুল ড্রাই থেকে মিশ্র হলে ১০-১৫ দিন পর পর একটি হেয়ার প্যাক ইউজ করুন।আর যদি আপনার চুল তৈলাক্ত হয় তবে ১৫ দিন পর পর একটি হেয়াক প্যাক ইউজ করুন।চুল পড়া রোধে করতে হেয়ার প্যাক আপনাকে অনেক উপকার দেবে।
আপনি যদি উপরের সব গুলো টিপস ব্যাবহার করেন তবে আমি আসা করসি মাত্র ২ সপ্তাহের মধ্যেই আপনার চুল পড়া বন্ধ হয়ে যাবে।আর একই সাথে চুল ঝলমলে ও কোমল হয়ে উঠবে।তবে দেরি কিসের আজ থেকেই ব্যাবহার করা শুরু করুন।