ড্রাই ও ফ্রিজি চুল নিয়ে চিন্তিত? সিল্কি এবং স্ট্রেট চুলে সব ধরনের হেয়ার স্টাইল যেমন করা যায় তেমনি চুল খুব সহজেই চুল ম্যানেজ করা যায় কিন্তু ড্রাই বা ফ্রিজি চুল ম্যানেজ করা অনেক ঝামেলার।আপনারও যদি ড্রাই ও ফ্রিজি হেয়ার প্রবলেম থাকে তবে কিভাবে চুল কে সিল্কি করবেন সেটিই আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। ফ্রিজি চুল কে ম্যানেজ করা কোনো যুদ্ধ জয় করার চেয়ে কম নয়।তাই ড্রাই চুলের একটু বেশিই কেয়ার করার প্রয়োজন।শুধু বাইরের কেয়ার নয় তার পাশাপাশি চুল কে ভিতর থেকে পুষ্টি জোগাতে হবে।তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পুষ্টি,খনিজ,ভিটামিন ও কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার অ্যাড করুন,এতে আপনার চুল ভেতর থেকে পুষ্টি পাবে আর বাইরে থেকে কিভাবে চুল কে সিল্কি করবেন তার জন্য আজকের লেখা টা মনোযোগ দিয়ে পড়তে থাকুন..
চুল ড্রাই ও ফ্রিজি হওয়ার কারণ:

চুল ড্রাই হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। চুল ড্রাই হলেই চুল ফ্রিজি হয়ে যায় না। ফ্রিজি হওয়ার জন্যও আলাদা কারণ রয়েছে।তবে আসলে কি কারণে চুল ড্রাই ও ফ্রিজি হয় সেটাই জেনে নিই চলুন।
১. চুলে তেল ইউজ না করা: আজকাল চুলে তেল ইউজ করতে কেউ পছন্দ করে না।কিন্তু তেলেই চুলের পুষ্টি,তেল ইউজ না করলে চুল ড্রাই হয়ে যাবে তাই নিয়মিত চুলে তেল ইউজ করুন।
২. চুলে চিরুনি করা: চুলকে গোড়া থেকে মজবুত করতে চিরুনি করা টাও অনেক দরকারি।তবে চুলে চিরুনি করা টা যেমন দরকারি,চুলে বেশি চিরুনি করা টা কিন্তু তেমনি ক্ষতিকর।দিনে ২/৩ বার চিরুনি করুন।
৩. বিভিন্ন কালার বা ব্লিচিং: চুলে বিভিন্ন ধরনের কালার করলে বা ব্লিচিং করলে চুল অনেক বেশি ড্রাই ও ফ্রিজি হয়ে যায়।
৪. অতিরিক্ত চুলে শ্যাম্পু করা: শ্যাম্পু ছাড়া চুল কে তো ভাবাই যায়না।তবে বেশি শ্যাম্পু করা চুলের জন্য অনেক ক্ষতিকর,এতে চুল ড্রাই হয়ে যায় বেশি।
৫. অতিরিক্ত ব্লো ড্রাই করা: চুলে বেশি বেশি ব্লো ড্রাই করলেও চুল ড্রাই এবং ফ্রিজি হয়ে যায়। ড্রাই হেয়ার হলে ব্লো ড্রাই না করায় ভালো।
৬. আবহাওয়া জনিত কারণ: আপনার এলাকার আবহাওয়া ও আপনার ড্রাই ও ফ্রিজি চুল হওয়ার কারণ হতে পারে।
৭. রেগুলার চুলে হিট দেওয়া: চুলে বিভিন্ন স্টাইল করার জন্য চুলে হিট দেওয়া খুবই কমন একটি বিষয় কিন্তু এটির ফলেই চুল ড্রাই ও ফ্রিজি হয়ে যায়।
৮. অতিরিক্ত সূর্য তাপে থাকা: সূর্যের তাপ আপনার চুলের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।অধিক টাইমে সূর্যের তাপে চুল খোলা রাখলে চুল ড্রাই হয়ে যায়।
৯. গরম তেল ইউজ করা: চুলে গরম তেল মালিশ করলে চুলের ভালো বৃদ্ধি হয় কিন্তু তেল যদি অতিরিক্ত গরম হয় তবে আপনার চুল পড়ে যাওয়ার পাশাপাশি চুল ড্রাই এবং ফ্রিজি হয়ে যায়।তাই গরম তেল ইউজ করার সময় সাবধান থাকবেন।
১০. বংশগত কারণ: অনেকের বংশগত কারণেও চুল ড্রাই বা ফ্রিজি হতে পারে।
উপরের এই কারণ গুলোর জন্যই চুল বেশি ড্রাই ও ফ্রিজি হয়ে যায়।চুল কে ড্রাই হওয়া থেকে রক্ষা করতে উপরের কারণ গুলোর কথা মাথায় রাখুন এবং নেক্সট টাইম সাবধানতার সাথে চুলের কেয়ার করুন।
ড্রাই ও ফ্রিজি চুলের ঘরোয়া প্যাক:
ড্রাই ও ফ্রিজি চুলের হাত থেকে বাঁচতে আজ আমি ৩টি স্পেশাল ঘরোয়া হেয়ার প্যাক শেয়ার করবো।প্রতিটি প্যাকই আপনার ড্রাই চুলের সমস্যা দুর করে চুল কে সিল্কি করে তুলবে।
১. দই-কলা হেয়ার প্যাক:

উপকরণ: দই,কলা ও মধু।
রেসিপি: আপনার চুলের লেনথ অনুযায়ী দই নিন এবং তাতে একটি কলা দিয়ে ভালো করে মিশ্রণ তৈরি করুন।এরপর মিশ্রণটিতে ২ চামচ মধু অ্যাড করুন।
ব্যবহার: আপনার চুল কে হালকা ভিজিয়ে নিন তারপর প্যাক টা চুলে মেখে নিন এবং ৩০ মিনিট রেখে দিন।এই প্যাকে থাকা প্রতিটি উপাদান পুষ্টিতে ভরপুর।দই ও কলা চুলকে খুসকিমুক্ত এবং মসৃণ করতে সাহায্য করে একই সাথে চুল কে করে তুলবে নরম ও মোলায়েম।সপ্তাহে অন্তত দুদিন কলার হেয়ার প্যাক ব্যবহার করুন।
২. ডিম-লেবু হেয়ার প্যাক:

উপকরণ : ডিম,লেবু ও অলিভ ওয়েল।
রেসিপি : একটি ডিমের সাদা অংশ নিন ও তার মধ্যে একটি লেবুর হাফ অংশ দিন এবং ২ চামচ অলিভ ওয়েল অ্যাড করে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিন।
ব্যবহার: আপনার চুলের গোঁড়ায় ও চুলের লেন্থে মিশ্রণ টি অ্যাপ্লাই করে নিন।১৫ মিনিট রেখে নরমাল পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।প্যাক টি তে থাকা উপাদান গুলো একসাথে মিশে আপনার চুল কে ড্রাই হওয়ার হাত থেকে বাঁচাবে।
৩. অ্যালোভেরা-মেথি হেয়ার প্যাক:
উপকরণ: অ্যালোভেরা ও মেথি।
রেসিপি : হাফ কাপ মেথি কে ওভার নাইট ভিজিয়ে রাখুন।পরদিন সকালে ন্যাচারাল অ্যালোভেরা বা অ্যালোভেরা জেল ও মেথি দিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন।প্রয়োজনে এক্সট্রা পানি ইউজ করতে পারেন।

ব্যবহার: চুলে ভালো করে পেস্ট টা মেখে নিন।চুলের গোড়া ও লেনথ সবজায়গায় ইউজ করুন এবং এভাবেই ৩০ মিনিট রেখে দিন।অ্যালোভেরা চুল কে শাইনি করতে সাহায্য করে এবং মেথি চুলের গোড়া শক্ত করবে।সপ্তাহে ২দিন এই হেয়ার প্যাক টি ইউজ করুন।
ড্রাই ও ফ্রিজি চুলের কন্ডিশনার:
ড্রাই ও ফ্রিজি চুল কে সিল্কি স্মুথ করার জন্য অবশ্যই শ্যাম্পুর পড়ে কন্ডিশনার ইউজ করতে হবে।যখনই শ্যাম্পু করবেন,শ্যাম্পুর পরে অবশ্যই একটি কন্ডিশনার ইউজ করবেন।তবে কন্ডিশনার টি ঘরোয়া হলে কেমন হয়? হ্যাঁ এখন আপনাদের একটি ঘরোয়া কন্ডিশনার রেসিপি শেয়ার করবো।
উপকরণ: নারকেল তেল ও মধু ।
রেসিপি: চুলের লেনথ অনুযায়ী নারকেল তেল নিন এবং তেলের মধ্যে ২/৩ চামচ মধু দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন।
ব্যবহার: শ্যাম্পুর পর বাজার থেকে কেনা কন্ডিশনার এর মত করেই ঘরোয়া কন্ডিশনার টি ইউজ করুন।তবে আপনি চাইলে যেকোনো সময় চুল কে ম্যানেজ করার জন্যও কন্ডিশনার টি ইউজ করতে পারেন।এই কন্ডিশনারটির কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই তাই আপনি চোখ বন্ধ করে কন্ডিশনার টি ইউজ করতে পারবেন।
আরো কিছু টিপস:
ড্রাই ও ফ্রিজি হেয়ারের সমাধানে আরো কিছু টিপস আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।উপরের ঘরোয়া প্যাক ইউজ করার পাশাপাশি আপনি যদি এই টিপস গুলো ফলো করেন তবে আশা করছি আপনার সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবেন।

১. শ্যামপুর পরে অবশ্যই একটি কন্ডিশনার ইউজ করুন সেটা হোম মেড হক আর বাজার থেকে কেনাই হক না কেনো।
২. চুলে ভিটামিন ই সমৃদ্ধ ন্যাচারাল অয়েল ইউজ করুন।নারকেল তেল এটির সবচেয়ে ভালো সোর্স।তবে আপনি ভিটামিন ই ক্যাপসুল ও ইউজ করতে পারেন।
৩. চুলের জোট ছাড়াতে কাঠের চিরুনি ইউজ করুন।
৪. নিয়মিত হেয়ার ম্যাসেজ করুন।যেমন হট অয়েল ম্যাসেজ।তবে তেল যেনো বেশি গরম না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
৫. কেমিক্যাল প্রোডাক্ট কম ইউজ করুন।চেষ্টা করবেন সম্পূর্ণ ন্যাচারাল উপায়ে চুলের কেয়ার করার যাতে আপনার চুলের ড্রাই ও ফ্রিজি ভাব ভিতর থেকে ঠিক হয়ে যায়।
আপনার ফ্রিজি চুলকে সিল্কি করতে আমার টিপস গুলো ফলো করুন।আশা করছি আমার টিপস গুলো আপনাদের প্রবলেম সলভ করতে অনেক বেশি হেল্পফুল হবে।এছাড়া কি কি কারণে ড্রাই হেয়ারের প্রবলেম হয় সেটি তো আপনাদের জানিয়েই দিলাম।
Very helpful thanks