তেল চিটচিটে ত্বক! সারাদিনই মুখে তেলতেলে ভাব থাকে! কিছুতেই তৈলাক্ত ভাব যায় না! মুখের উজ্জ্বলতা কমে গেছে! তৈলাক্ত ত্বকের এমন হাজার টা প্রবলেম এর কথা জানা যায়। কিন্তু এর সমাধান কি কিছুই নেই? খেয়াল করে দেখবেন তৈলাক্ত ত্বকের বেশির ভাগ প্রবলেম এই গরমের দিনে বেশি হয়। এইসব সমস্যার সমাধান কেবল মাত্র প্রাকৃতিক উপায়েই সমাধান করা যায়। প্রাকৃতিক উপায় মানেই হলো ১০০% ভরসা যোগ্য উপাদান। তৈলাক্ত ত্বক দুর করতেও তাই প্রাকৃতিক উপায়েই ভরসা করা যায়। তাইতো আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করবো কিভাবে প্রাকৃতিক উপায়ে তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন নিবেন এবং তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।তাহলে লেখা টি শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।

ত্বক তৈলাক্ত হওয়ার কারণ :
১. বিভিন্ন কারণেই ত্বক তৈলাক্ত হয়ে পড়ে। বেশি ক্ষার যুক্ত সাবান বা অতিরিক্ত মুখ ধোয়া তার মধ্যে অন্যতম কারণ। অনেকেই সারাদিনে অতিরিক্ত মুখ ধুয়ে ফেলে বা অতিরিক্ত ক্ষার যুক্ত সাবান ইউজ করে যার ফলে ত্বকের স্বাভাবিক মেকানিজম-কে ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং সিবেসিয়াস গ্রন্থিকে বেশি কার্যক্ষম হয় এবং অতিরিক্ত ফলে তেল উৎপন্ন হয়। যারা অতিরিক্ত বা বারবার মুখ ধোয় তাদের মুখের প্রয়োজনীয় তেল চলে যায় ফলে তেল গ্রন্থিগুলো ত্বককে বাঁচাতে আরো বেশী তেল তৈরি করে। আপনার ত্বকে যে তেল রয়েছে সেটি আসলে আপনার নাচ্যারাল অয়েল। ত্বককে ড্রাই হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে আপনার ত্বক নিজে থেকেই তেল টা বের করে মুখে ছড়িয়ে দেয়। আর তার ফলেই ত্বক তৈলাক্ত হয়ে পরে।
২. আমাদের সবার ত্বকে থাকে সেবাসিয়াস গ্রন্থি যা অতিরিক্ত সিবাম উৎপাদনের জন্য দায়ী। কিন্তু সিবাম টা আসলে কি? সিবাম হলো একটি চর্বি গঠিত তৈলাক্ত পদার্থ যার প্রধান কাজ ত্বককে রক্ষা,ময়েশ্চারাইজ করা এবং আপনার চুলকে সিল্কি ও স্বাস্থ্যকর রাখা। সিবাম আমাদের ত্বক এবং চুলের জন্য খুবই দরকারি উপাদান তবে অত্যাধিক সিবাম তৈরি হলে টা ত্বকের ছোট ছোট ছিদ্রে আটকে জমে যায় এবং এতে ব্রণ হতে পারে। অতিরিক্ত সিবাম তৈরি হতে পারে বিভিন্ন কারণে যেমন বংশগত কারনে, হরমোনের পরিবর্তন, স্ট্রেস বা মানসিক চাপে সিবাম বেশি বাড়াতে পারে।

তৈলাক্ত ত্বক থেকে রক্ষা :
ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করে ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে হলে আপনাকে খুবই সহজ কিছু টিপস ফলো করতে হবে। তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো রিভার্স মেথড। এই মেথড টা ইউজ করলে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব চিরকালের জন্য দুর হয়ে যাবে। তাহলে কি সেই রিভার্স মেথড? চলুন জেনে নেওয়া যাক।
রিভার্স মেথড :
তৈলাক্ত ত্বকের প্রবলেম হলে আপনি হয়তো ভাবতে পারেন যে ত্বক বেশি বেশি করে ধুয়ে হবে বা সাবান ইউজ করতে হবে। কিন্তু আপনি যত বার মুখে সাবান ইউজ করবেন আপনার ত্বক তত বেশি তেল তৈরি করবে এবং মুখে ছড়িয়ে দেবে তাই নিয়ম করে সারাদিনে মাত্র ২ বার মুখ ধুবেন বা সাবান দিবেন। তৈলাক্ত ত্বক হলে অনেকেই ত্বকে ময়শ্চারাইজার ইউজ করেন না কিন্তু তৈলাক্ত তোকেই সব চেয়ে বেশি ময়শ্চারাইজার ইউজ করার দরকার। কারণ আপনার ত্বককে ড্রাই হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে আপনার ত্বক নিজেই তেল তৈরি করে মুখে ছড়িয়ে দেয়। তাই আপনার যদি তৈলাক্ত টক হয়ে থাকে তাহলে বুঝতে হবে আপনার ত্বক ও এক বেশি ড্রাই হয়ে যাচ্ছে তাই ত্বক নিজেই তেল তৈরি করছে। তাই আপনি যদি তৈলাক্ত ত্বক থেকে বাঁচতে চান তবে ড্রাই স্কিন দুর করার চেষ্টা করুন। আপনার স্কিনের ড্রাই ভাব যত দ্রুত দুর হবে ততই তৈলাক্ত ত্বক থেকে মুক্তি পাবেন।

বোনাস টিপস :
আপনার স্কিন কেয়ার রুটিনে সামান্য কিছু পরিবর্তন এনে সহজেই তৈলাক্ত ত্বক থেকে মুক্তি পেতে পারেন। দিনে মাত্র ২ বার একটা মাইল্ড ফেসওয়াশ দিয়ে ভালো করে স্কিন টা ধুয়ে নিবেন (এছাড়া কোনো প্রয়োজন ছাড়া মুখ ধোয়ার দরকার নেই) মুখ ধোয়ার পরে অবশ্যই মইটুরাইজার ইউজ করে নিবেন। এবং দিন হলে একটি সানস্ক্রিন ইউজ করবেন।
প্রাকৃতিক উপায় :
স্কিন কেয়ার রুটিন টা ফলো করার পাশাপাশি সপ্তাহে একটি দিন অবশ্যই একটি ফেস মাস্ক ইউজ করতে হবে যাতে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর হয়। এবং ফেস মাস্ক টা হবে এমন যেটি একই সাথে ত্বকের ড্রাই ভাব ও দুর করতে পারবে।তবেই না তৈলাক্ত ত্বকের প্রবলেম ভিতর থেকে দুর হবে। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য বিশেষভাবে কার্যকরী এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এমন ৫ টি উপাদান শেয়ার করবো। তবে চলুন এইবার প্রাকৃতিক উপায় গুলো শেয়ার করি।
১. মধু :

মধু এমন একটি উপাদান যা প্রাকৃতিকভাবে ত্বক এক্সফলিয়েট করতে পারে এবং ত্বকের অতিরিক্ত তেল কমাতে সাহায্য করে। মধু ত্বকের ছোট ছোট ছিদ্র বা পোর গুলো কে খুলে দেয়। ফলে পোর গুলোর ভিতরে জমে থাকা তেল খুব সহয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। মধু তৈলাক্ত ত্বকে লাগিয়ে ৫ থেকে ১০ মিনিট অপেক্ষা করে হালকা গরম পানি দিয়ে তা ধুয়ে ফেলুন। এতে আপনার ব্রণ এর সমস্যাও দুর হবে।
২. অ্যালোভেরা :
অ্যালোভেরার গুনগুন তো সবাই জানে। তৈলাক্ত ত্বকের যত্নেও এর বিশেষ গুণ রয়েছে। অ্যালোভেরা তে রয়েছে অ্যাস্ট্রিঞ্জেন্ট এবং হাইড্রেটিং গুণ যা ত্বকের ছিদ্র সঙ্কুচিত করে এবং ত্বকের অতিরিক্ত তেল তৈরি করতে বাধা দেয়। অ্যালোভেরা জেলের মধ্যে এক চামচ লেবুর রস অ্যাড করে ৫-১০ মিন ত্বকে লাগিয়ে রেখে ভালো করে ধুয়ে নিন।
৩. কলা :
কলার বিশেষ গুন ত্বককে এক্সফলিয়েট করে। যার ফলে ত্বকের ডেড সেলস গুলো উঠে আসে। এবং ত্বকে একটি উজ্জাল্য ভাব এনে দেয়। ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করে উজ্জলতা ফিরিয়ে আনতে কলার ফেস মাস্ক ইউজ করুন। একটি কলার পেস্ট তৈরি করে নিন এরপর এতে একটি ডিমের সাদা অংশ অ্যাড করে মুখে লাগিয়ে নিন। ১৫ মিনিট পর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ টা ধুয়ে নিন।
৪. লেবু :

লেবু তে থাকে এসিড যা অতিরিক্ত তেল কে শুষে নেয়। ত্বকের তৈলাক্ত ভাব ইনস্ট্যান্ট দুর করতে হলে লেবুর তুলনা নেই। একটি লেবুর অর্ধেক অংশ মুখে সার্কুলার মোশানে রাব করুন ৫ মিনিট। এরপর নরমাল পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।
৫. কালোজিরা :
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য কালোজিরা খুব উপকারী। কালোজিরার প্রধান উপাদান আপনার ত্বকের Ph স্কেল কে নিউট্রাল করতে সাহায্য করে পাশাপাশি ব্রণ এর দাগ দূর করে। এক চামচ কালোজিরার গুঁড়ার মধ্যে এক চামচ অলিভ ওয়েল অ্যাড করে মুখে মেখে নিন। এইভাবেই ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করে মুখ টা ভালো করে ধুয়ে নিন।
উপরের ৫ টি উপাদান খুবই দরকারি আমাদের সকলের স্কিনের জন্য। তাই আজ থেকেই রেমেডি গুলো ইউজ করা শুরু করুন। তেল সকলের তোকেই থাকে শুধু কারোর বেশি তো কারো কম। তাই রেমেডি টা সবাই ইউজ করতে পারবেন। তবে তৈলাক্ত ত্বকে ইউজ করলে বেশি ভালো ফলাফল পাবেন।

আশা করছি আজকের লেখা আপনাদের জন্য অনেক হেল্পফুল হবে। আপনি উপরের সব কয়টি টিপস নিয়মিত ফলো করলে আপনার তৈলাক্ত ত্বকের প্রবলেম চিরদিনের জন্য দূরে হয়ে যাবে। আজকের লেখা টি পড়ে তো জেনেই গেলেন তৈলাক্ত ত্বক কেনো হয়, এর প্রতিকার কি, এবং তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন কিভাবে নিবেন। আশা করছি লেখা তো আপনাদের ভালো লাগবে। শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য ধন্যবাদ।