চুল লম্বা হয় না বা চুল পাতলা হয়ে যাচ্ছে বা অতিরিক্ত চুল পড়ে যাচ্ছে আজকাল প্রায় সবারই একই সমস্যা।আমাদের জীবনযাত্রার মান পাল্টাচ্ছে,চারিদিকের বিভিন্ন দূষণ ও মানসিক চাপের মাঝে চুলের সমস্যা হবে এইটাই তো স্বাভাবিক। চুলেই নারীর সৌন্দর্য প্রকাশ পায় তাই শুধু তাই নয় চুল কিন্তু ছেলেদেরও সৌন্দর্যের কারণ। আপনারও যদি চুলের বিভিন্ন সমস্যায় ভোগেন তাহলে আজকের টিপস গুলো আপনার জন্য।আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো কিভাবে খুব দ্রুত চুল লম্বা ও ঘন করবেন।
চলুন তবে শুরু করি…
চুলের গ্রোথ ভালো না হওয়ার কিছু কারণ:
চুলের গ্রোথ ভালো না হওয়ার জন্য অনেক কারণ রয়েছে।তার মধ্যে যে কারণে বেশি চুলের গ্রোথ বাধা পায় সেগুলো দেখে নিন-
১.অতিরিক্ত স্ট্রেস:

আজকাল অতিরিক্ত স্ট্রেস করেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া খুব কষ্টকর।একটি সমীক্ষায় দেখা যায় বিভিন্ন কারণে মানুষের স্ট্রেস এর হার দিন দিন বাড়ছে।তবে এই স্ট্রেস আমাদের চুলের গ্রোথ এ বাধা হয়ে দাড়ায়।
২.থাইরয়েডের সমস্যা:
থাইরয়েডের কারণে অনেক সময় চুলের গ্রোথ এ বাধা এবং চুল পড়ে যাওয়ার মত সমস্যা দেখা যায়।থাইরয়েডের একটি লক্ষণ অনেক বেশি পরিমাণে চুল পড়ে যাওয়া।
৩.বংশগত:
চুল পড়ে যাওয়া কিন্তু একটি বংশগত সমস্যা।আমাদের শরীরের চুলের গ্রোথ বৃদ্ধিকারী জিন বংশগত ভাবে আমাদের শরীরে আসে।তাই আপনার বংশে যদি চুল পড়ে যাওয়া সমস্যা থাকে তবে আপনার চুল ও পড়ে যেতেই পারে।
৪. হরমোনাল চেঞ্জ:
শরীরের হরমোনের সাথে চুলের গ্রোথ এর সম্পর্ক রয়েছে।তাই হরমোনাল চেঞ্জ হলে অনেক ক্ষেত্রে চুল পড়ে যায়।
৫.অতিরিক্ত কেমিক্যাল ব্যবহার:

কেমিক্যাল প্রোডাক্ট ইউজ করে আমরা চুলের স্টাইল বা ফ্যাশান খুব সহজেই করতে পারি কিন্তু এই কেমিক্যাল প্রোডাক্ট ইউজ করা আপনার চুলের গ্রোথ এ প্রভাব ফেলতে পারে এমনকি চুল পাতলা করে দিতে পারে।
চুলের গ্রোথ বৃদ্ধির উপায়:
চুলের গ্রোথ বৃদ্ধি করতে আপনাকে সামান্য কিছু টিপস ফলো করতে হবে।কার্যকরী কিছু টিপস ইউজ করলেই খুব তাড়াতাড়ি আপনার চুল আগের চেয়ে অনেক লম্বা হয়ে যাবে-
১. হেয়ার ম্যাসাজ:

চুলে তেল দিতে কার বা ভালো লাগে?কিন্তু চুলের খাদ্য তেল,তাই সুন্দর চুল বানাতে হলে অবশ্যই চুলকে তার খাদ্য দিতে হবে।চুলের গ্রোথ বৃদ্ধি করতে তাই হেয়ার ম্যাসাজ এর উপর নজর দিতে হবে।কুসুম গরম তেল মাথার তালু তে ম্যাসাজ করলে চুলের গ্রোথ ভালো হয়।চুল দ্রুত লম্বা করতে হবে সপ্তাহে ২/৩ দিন ক্ষতি নারকেল তেলের মধ্যে কিছুটা ক্যাস্টর তেল মিশিয়ে ম্যাসেজ করুন।ম্যাসাজ করলে চুলের গোড়ার ফলিকল গুলো উদ্দীপিত হয় জার ফলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে এবং চুল দ্রুত লম্বা হয়।
কন্ডিশনার ব্যবহারে সচেতনতা:
অনেকেই মনে করেন কন্ডিশনার শুধু ড্রাই চুলের জন্য আবার অনেকেই ড্রাই চুল সিল্কি করতে অনেক সময় চুলে কন্ডিশনের লাগিয়ে রাখেন কিন্তু এই দুটোই কিন্তু ভুল ধারণা। কন্ডিশনার সব ধরনের চুলের জন্যই প্রয়োজন।তবে অধিক টাইমে কন্ডিশনার লাগিয়ে রাখা তাও চুলের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে।তাই শাম্পুর পরে নিজের চুলের টাইপ অনুযায়ী কন্ডিশনার ইউজ করুন এবং অবশ্যই চুলে ২/৩ মিনিটের বেশি সময় কন্ডিশনার রাখবেন না।
৩.বালিশের কাভার:
দ্রুত চুল লম্বা করতে হলে অবশ্যই বালিশের কাভার ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে।বালিশের কাভার সূতি কাপড়ের তুলনায় সিল্ক, সাটিন এর কাপড় দিয়ে তৈরি হলে বেশি ভালো হয়।রাতে চুলে তেল দিয়ে ঘুমোলে সুতির কাভার তেল শোষণ করে নেই তাছাড়া সুতির কাভারে চুল বেশি ঘর্ষণ প্রাপ্ত হয়।সিল্ক বা সাটিনের কাভারে এই সমস্যা গুলো থাকে না।
৪. কাঁচি ব্যবহার:

চুল ছোট করতে যেমন কাঁচির দরকার হয় চুল দ্রুত লম্বা করতে হলেও কাঁচির দরকার হয়।চুল লম্বা করতে হলে নিয়মিত ভুল ট্রিম করার প্রয়োজন হয়।প্রতি ৩/৪ মাস পর পর একবার চুল ট্রিম করলে চুল দ্রুত লম্বা হয়।চুলের ফাটা,ভঙ্গুর ও ক্ষতিগ্রস্ত আগা কেটে ফেলতে হবে।এটি চুল বৃদ্ধি তে অনেক সাহায্য করে।
৫. চুলের স্টাইলিং:
অনেকেই চুলে বিভিন্ন ধরনের স্টাইল করতে পছন্দ করেন।তবে স্টাইল করার সময় একটা ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।চুল বেশি টাইট করে বাধা যাবে না।চুল বেশি টাইট করে বাঁধলে চুলের গোড়া দুর্বল হয়ে যায় তাছাড়া ভেজা চুল বাঁধার থেকেও বিরত থাকুন এতে চুল মাইক্রোবিয়াল ইনফেকশন দ্বারা আক্রান্ত হয় ফলে চুল ঝরে পড়ে।
চুল দ্রুত ঘন ও লম্বা করার ঘরোয়া উপায়:
কিছু প্রাকৃতিক উপাদান আছে যা আপনার চুল কে গোড়া থেকে মজবুত করে দ্রুত লম্বা করতে সাহায্য করবে।এই প্রাকৃতিক উপাদান গুলো ইউজ করলে অনেক সহজেই চুলকে ঘন ও লম্বা করতে পড়বেন।
১.অ্যালোভেরা
২.আমলা
৩.হেনা
৪.ভৃঙ্গরাজ
৫.জবা
৬.আপেল সাইডের ভিনেগার
৭.নারকেল তেল ইত্যাদি।
চুল লম্বা ও ঘন করতে খাদ্যাভ্যাস:
১.প্রোটিন:
চুল লম্বা ও ঘন করতে অবশ্যই আপনাকে অ্যামিনো অ্যাসিড যুক্ত খাবার খেতে হবে কারণ আমাদের চুল যে প্রোটিন দিয়ে তৈরি সেটি শুধুমাত্র অ্যামিনো অ্যাসিড এই পাওয়া যায়।নতুন চুল গজানোর জন্যে অবশ্যই আপনার শরীরকে পর্যাপ্ত অ্যামিনো এসিড সরবরাহ করতে হবে। মাছ, মাংস, পনির, দুধ, ডিম – আপনার খাদ্য তালিকায় প্রতিদিনই এগুলোর অন্তত একটি রাখার চেষ্টা করুন। সয়াবিন, মটরশুঁটি, কলা, বাদাম ইত্যাদি থেকেও পেতে পারেন। তবে নন-ভেজিটেরিয়ান খাবারে প্রোটিনের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি।
২.আয়রন ও জিঙ্ক:

মাথার কোষে অক্সিজেন সরবরাহ করতে আয়রন ও জিঙ্ক সাহায্য করে।নতুন চুল গজাতে এবং চুল লম্বা করতে মাথার কোষে অক্সিজেন সঠিক মাত্রায় সরবরাহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।তাই বেশি করে আয়রন ও জিঙ্ক সমৃদ্দ খাবার গ্রহণ করুন।সিম,মটরশুঁটি,বাদাম,মাংস, দূধ ও ডিমে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও জিঙ্ক রয়েছে।
৩.ভিটামিন সি ও ডি:
চুল বৃদ্ধি তে এবং চুলের গোড়া মজবুত করে চুল কে ঘন করতে ভিটামিন সি ও ডি উভয়ই খুবই গুরুত্বপূর্ণ।পেয়ারা,লেবু,কাঁচা মরিচের মধ্যে ভিটামিন সি রয়েছে আর ডিম, দুধ, পনির, মাছ, সোয়াবিন, সবুজ সবজির মধ্যে রয়েছে ভিটামিন ডি।আপনার খাদ্য তালিকায় খাবার গুলো আজই অ্যাড করুন।
৪.পিয়াজ:
এতে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুলের ঝরে পড়া রোধ করে।নিয়মিত পিয়াজ খাবার হিসাবে গ্রহণ করলে আপনার চুল ঝরে পড়া কমবে এবং চুলের পাতলা হয়ে যাওয়া কম করবে।
বোনাস টিপস:
নিয়মিত চুল পরিষ্কার করা এবং চুলে চিরুনি করলে ভুল দ্রুত লম্বা হয়।দিনে ২/৩ বার চিরুনি করুন তবে বেশি বেশি চিরুনি করলেও চুলের ক্ষতি হতে পারে।সপ্তাহে ২ দিন চুল পরিস্কার করুন এবং চুলে সপ্তাহে অন্তত একদিন অবশ্যই একটি হেয়ার প্যাক ইউজ করুন।পিয়াজ,আমলা,কালোজিরা হেনা ইত্যাদির প্যাক আপনার চুল কে দ্রুত লম্বা ও ঘন করতে সাহায্য করবে।

নিয়মিত চুলের যত্ন ও পুষ্টিকর খাবারই পারে দ্রুত আপনার চুলকে লম্বা ও ঘন করে তুলতে।অল্প সময়ে ভালো ফলাফল পেতে আমার দেওয়া সব গুলো টিপস ধৈর্য ধরে ফলো করুন।আমার টিপস গুলো ফলো করলে আপনার চুল মাত্র কয়েক দিনেই লম্বা ও ঘন করতে পড়বেন।
চুলের যত্নে আপনি কোন তেল টি ইউজ করেন?